গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন ভোট যুদ্ধ হবে নৌকা-লাঙ্গলের
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচনে ৫ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, চায়ের দোকান, রেলওয়ে স্টেশন, হাট-বাজার প্রার্থীরা। দিচ্ছেন চর-বিরের মানুষকে নানা প্রতিশ্রতি। তবে এবার ভোটাররা ঝুঁকছেন নতুন মুখের দিকে।
পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে একজন বিকল্প ধারার প্রার্থী ঢাকাবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাত ও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন এবং জার্তীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম শহীদ রন্জু পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে মাঠে সবসময় কাজ করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার ভোটযুদ্ধ হবে মূলত: জাপার প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম শহীদ রন্জু ও নৌকার প্রার্থী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জনপ্রিয় নেতা মাহমুদ হাসান রিপনের মধ্যে। বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হলেও কখনও মানুষের দোড়গোড়ায় যায়নি এমন প্রার্থীরা ভোটের আগে মাঠে নামলেও তারা এখনো আলোচনার বাইরে রয়েছেন।
ফুলছড়ি উপজেলার চর খাটিয়ামারি গ্রামের বৃদ্ধ গোলাপ মিয়া বলেন, ‘চরের উন্নয়ন করবে, যারা হামাঘরে খোঁজখবর রাখবে হামরা তাকে ভোট কোনা দিমো। হামরা মার্কা বুঝি না, যাই এলাকার উন্নয়ন করবে তাকে ভোট দিমো।’ ফজলুপুরের আসমা বেগম বলেন, ‘এবার ওগলা চলবার নয়। ইভিএমএ ভোট দিমো। এবার নয়া ভোট নয়া মানুষ দেখিয়া দিমো। এবারেই প্রথম জাতীয় সংসদের ভোট দিবেন মদনেরপাড়া গ্রামের আরমান মিয়া (২২)। তিনি বলেন, নতুন ভোটার, পছন্দের মানুষটিই এবার প্রার্থী হয়েছেন। সেই মানুষটিকেই এবার ইভিএমএর মাধ্যমে ভোট দিবো।
বিকল্প ধারার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটে জয়-পরাজয় আছেই, দলকে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রার্থী হওয়ার প্রয়োজন আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাত ও সৈয়দ নাহিদুজ্জামান বলেন, এলাকায় আমাদের জন্ম। ভোট ভালো হলে আমরা অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবো।
তবে জাপার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এ এইচ এম গোলাম শহীদ রন্জু বলেন, এক সময় সাঘাটা-ফুলছড়ি জাতীয় পাটির দুর্গ ছিল। নির্বাচন ফেয়ার হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। দেখেন জাতীয় পার্টি উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমি পরপর দুইবার সাঘাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফলতার সঙ্গে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। সুযোগ পেলে এলাকার আরও উন্নয়ন করবো। তবে বর্তমান সরকারের আমলে ভোট নিয়ে সংশয় আছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বলেন, ‘ভোটাররা এবার নতুন মুখ দেখতে চায়। বিভিন্ন দুর্যোগে নিজের তহবিল থেকে মাহমুদ হাসান রিপন চরাঞ্চল চষে বেড়িয়েছেন। তিনি নিজে কোমর পানিতে নেমে তাদের দুঃসময়ে কাছে ছিলেন। নিজের টাকায় চাল-ডাল কিনে বিপদে কাছে ছিলেন গরিব দুখি মানুষের।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, আমি প্রতিশ্রুতিতে নই, কাজে বিশ্বাসী। তা আপনারা ইতিমধ্যে দেখেছেন। দুর্যোগেকে পাশে ছিলেন আরকে পালিয়ে ছিলেন। আমি ছিলাম আপনাদের মধ্যে। ছিলাম সঙ্গে, কাজ করেছি আপনাদের নিয়ে। আমি নির্বাচিত হলে সাঘাটা-ফুলছড়িবাসীর উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবো। বিজয়ী হলে নদীভাঙন রোধ এবং উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টানেল নির্মাণে কাজ করবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ আব্দুল মোত্তালিব জানান, এই সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মাধ্যমে। সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। দুই উপজেলা মিলে এ আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৪৩। ১২ অক্টোবর ভোট গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে সবধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া গত ২২ জুলাই দিনগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর দুদিন পর তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। সংবিধান অনুযায়ী কোনো আসন শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী ১২ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷