Breaking News

গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শাহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত" জাতিকে আর বিভক্ত করার সুযোগ দেবো না- ডা.শফিকুর রহমান

 বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা আর এই জাতিকে বিভক্ত করার সুযোগ কাউকে দেবো না। দল, ধর্ম বা গোষ্ঠীর ভিত্তিতে জাতিকে তারাই ভাগ করে, যারা জাতির দুশমন। যারা জাতির বন্ধু, তারা জাতিকে কখনো বিভক্ত করতে পারে না। গত, আগত ও অনাগত দেখে যেন আমাদের শিক্ষা হয়। যারা ক্ষমতায় থাকাবস্থায় জনগণের অর্থে কেনা অস্ত্র ও বুলেট জনগণের বুকে ধরার দুঃসাহস করবে এমন কেনো সন্ত্রাসী আর দেখতে চাই না। পুরো বাংলাদেশকে এক করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাতকে এক করতে হবে। বিশ্বকে জানান দিতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের মধ্যে কোনো বিভাজন নেই। যত বিভাজন রেখা তৈরি করা হয়েছিল সবগুলোকে আমরা পায়ের নিচে ফেলে দিয়েছি।”

৪ অক্টোবর শহরের রাজবাড়ী মাঠে গাজীপুর মহানগরী জামায়াতের আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “যারা এই সমাজের দুশমন তারাই শিল্প ধ্বংস করতে চায়। তারা শ্রমিকদের আবেগকে উসকে দিয়ে রাস্তায় নামায়। তারা বলে শ্রমিকরা ঘরে বসে বেনিফিট পাবে। অবশ্য কিছু মালিক আছেন যারা কেবল শ্রমিকদের ঘাম নয়, পারলে তাদের রক্ত চুষে নিতে চায়, এটি অন্যায়। শিল্প যারা বাঁচাবে আপনি তাদেরকে বাঁচতে দিন। আপনি তাদেরকে সম্মান করবেন, তারা সব শক্তি উজাড় করে আপনাকে সব কিছু বিলিয়ে যাবে। শিল্পের উন্নতি হবে, তাদেরও উন্নতি হবে। আমরা ওই রকম বৈষম্যহীন একটা সমাজ চাই। আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশুকে সরকার চারটি অধিকার- খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও সুশিক্ষা দিতে বাধ্য থাকবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে সুযোগ সন্ধানী মতলববাজরা মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধিয়ে রাখে। উদ্যোক্তা ও মালিক যদি না থাকে শ্রমিকরা কোথায় কাজ করবে। শিল্প যদি না বাঁচে কর্মসংস্থান কোথায় হবে। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা তার জায়গায় বসে ব্যবসা করুক, কোনো দুর্বৃত্তের সাহস হবে না তার কাছে চাঁদা চাওয়ার। বাজারে স্বস্তি থাকবে, সহনীয় দ্রব্যমূল্য থাকবে, যাতে প্রতিটি মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্বস্তির সাথে বসবাস করতে পারে। সামজিক নিরাপত্তা এমন হবে, সে ঘরের মধ্যে দরজা খোলা বা বন্ধ হোক রাতে শান্তিতে ঘুমাবে, কোনো দুর্বৃত্ত তার সম্পদ বা ইজ্জত লুটে নেয়ার সাহস করবে না। আমরা এমন একটি সমাজ চাই।”

তিনি আরো বলেন, “এই দেশ রক্তের বিনিময়ে বারবার মুক্তির জন্য আহাজারি করেছে। ১৯৪৭, ১৯৭১-এর পর আবার ২০২৪ সালে। কোনো জাতি তাদের নিজেদের স্বাধীন অধিকারের জন্য এত রক্ত দিয়েছে কি না, আমি জানি না। সমানতালে যুদ্ধ করেছে নারী-পুরুষ এবং দেড় মাসের শিশুরাও। ২৪ সালে যে নতুন স্বাধীনতা বাংলাদেশের মানুষ লাভ করেছে তার মাত্র দুই দিন আগে এক মা তার দেড় মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে রাস্তায় চলে এসেছেন। পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিলেন। সাংবাদিকরা বলেছিল মা তুমি সরে যাও। তোমার এই কচি বাচ্চা নিয়ে তুমি এখানে থেকো না। সে বলেছে আমার তো বড় বাচ্চা নেই। আমার পরিবারের কি কেউ শহীদ হবে না? আমি এই বাচ্চা নিয়ে শহীদ হওয়ার জন্য এখানে এসেছি। আমি আমার ও আমার বাচ্চার শাহাদতের বিনিময়ে জাতি মুক্ত হয়েছে, স্বাধীন হয়েছে আমি দেখতে চাই। আমরা দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা এই মায়েদের পেট থেকে সন্তান সৃষ্টি না করে যেন যোদ্ধা সৃষ্টি করে দেয়। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বকে জানিয়ে দেবো যে, এখন থেকে বাংলাদেশের মানুষ কালোকে কালো এবং সাদাকে সাদা বলবে। আমরা চাই এমন একটা দেশ হবে, যে দেশে বৈষম্য থাকবে না।”

শহীদ পরিবারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “যারা শহীদ হয়েছে তারা চাকরি পাওয়ার জন্য বা কারো সহযোগিতার জন্য লড়াই করেনি। তারা আমাদের অহঙ্কার, মর্যাদার ও সম্মানের পাত্র। তারা নিঃস্বার্থ লড়াই করেছে জাতিকে সম্মানীত করার জন্য। জাতির দায়িত্ব এখন তাদের পরিবারকে সম্মানীত করা। এটি করতে হবে, এর বিকল্প নেই। সরকারের কাছে দাবি জানাবো তাদের সঠিক স্বীকৃতিটা যেন দেয়া হয়। প্রতিটি শহীদ পরিবার থেকে কমপক্ষে একজনকে যেন সরকার সম্মানজনক চাকরির ব্যবস্থা করে। লড়াই করে যারা আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে তাদেরকেও যেন সম্মানজনক চাকরি দেয়া হয়। তারা যেন আজীবন কারো করুণার পাত্র হয়ে না থাকে।”

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমাদের এমন একটা সমাজ প্রয়োজন যে সমাজে শিক্ষিত মানুষগুলো কলমের খোঁচায় হাজার হাজার কোটি টাকা জাতির কাছ থেকে লুটপাট করবে না। আমরা কোনো শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদকে আদালতের বিচারক হতে দেখতে চাই না। কোনো দুর্বৃত্তকে আদালতের চেয়ারে দেখতে চাই না। একজন সরকারি কর্মকর্তা রাষ্ট্রের সেবক, তিনি দল গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সেবক না। আমরা এমন কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী আগামীতে দেখতে চাই না যাদেরকে বাধ্য করা হবে রাষ্ট্র, জনগন বাদ দিয়ে গোষ্ঠীর পূজা করার জন্য। এমন একটা দেশ আমাদের সবার কামনা। সেই দেশটা আমাদেরকেই গড়তে হবে, ইনশা আল্লাহ।”


তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সাড়ে ১৫ বছর জামায়াতে ইসলামীর ওপর ইতিহাসের বর্বরতম নির্যাতন করা হয়েছে। ১১ জন শীর্ষ নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। জুলুম করে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। সর্বশেষ দুঃখজনক ঘটনার শিকার হয়েছেন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, আমরা দেখতে চাই এই জগতে সেই হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনাকারী, মাস্টারমাইন্ড, হত্যা বাস্তবায়নকারী, আদালতে বসে যারা দুষ্ট রায় দিয়েছেন, মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন, তদন্ত করতে গিয়ে যারা নাটক সাজিয়েছেন এদের কেউ যেন সেই অপরাধ থেকে রেহাই না পায়। তারা গোটা জাতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক অফিসারদেরকে ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই মাসের মাথায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। নিরীহ মানুষ যারা জেলে বন্দী আছে তাদের সবার মুক্তি চাই। আমরা বলেছিলাম প্রতিশোধ নেব না, আইন হাতে তুলে নেব না। আমাদের সহকর্মীরা চরম ধৈর্যধারণ করেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে আলেমদের সাথে কী নির্মম আচরণটা করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে চতুর্দিকে আলো নিভিয়ে তারা ব্রাশফায়ার করে কতজনকে যে হত্যা করেছে, তা আল্লাহ ভালো জানেন। তাদের লাশটিও পাওয়া যায়নি। দুষ্ট সরকারের কয়েক মন্ত্রী ৫ আগস্টের মাত্র চার দিন আগে বলল বাড়াবাড়ি করবেন না, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর ভুলে যাবেন না। রাত ১২টার পর আমরা সব ক’টিকে সাফ করে দিয়েছি।”

গাজীপুর মহানগরী আমীর অধ্যাপক মুহা: জামাল উদ্দীন এর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান, ঢাকা উত্তর অঞ্চল টিমের সদস্য আবুল হাসেম খান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা জামায়াতের আমীর ড. জাহাঙ্গীর আলম,মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ খায়রুল হাসান, সেক্রেটারি আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক, শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাউদ্দিন আইউবী প্রমুখ।


কোন মন্তব্য নেই

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷