আবারও কি বন্ধ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান?
গত ১০ ডিসেম্বর দেশে প্রথম করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ধরা পড়ে। জার্মান একটি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২০ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশে প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ডেল্টা ও ওমিক্রন দুটি ধরনেরই প্রভাব রয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পর্যটনকেন্দ্র, নির্বাচনসহ জনসমাগমস্থল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদদের মতে, কোনো দেশে করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে মনে করা হয়। দেশে প্রায় সাড়ে তিনমাস আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ ছিল। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সংক্রমণের হার হ্রাস পেয়ে দুই শতাংশের নিচে নেমে আসে। তবে গত ২০ ডিসেম্বরের পর থেকে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। নতুন বছর শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার দ্বিগুণের বেশি হয়।
করোনা সংক্রমণ রোধে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একমাসের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে। সমাজে যেসব বিষয়ে জনসমাগম হয়ে থাকে, সেসব কিছুই আপাতত কমপক্ষে এক মাসের জন্য স্থগিত করে দেওয়া উচিত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের গুঞ্জন উঠলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ওমিক্রন রোধে জাতীয় কমিটির সুপারিশ মানা হবে।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সম্প্রতি করোনার নতুন ধরন অমিক্রনের কারণে প্রয়োজনে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে জানালেও আজ শনিবার (৮ জানুয়ারি) বলেছেন ভিন্ন কথা।
ওমিক্রন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আজ (শনিবার) আমাদের মন্ত্রণালয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আছে। আগামীকাল (রোববার) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল, মার্চে গিয়ে সংক্রমণ বাড়বে। কিন্তু এখন জানুয়ারির গোড়াতেই বাড়তে শুরু করেছে। কাজেই যে পরিকল্পনা, তাতে কিছুটা সমন্বয়ের দরকার হবে। কিন্তু আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। বরং আমরা চাই প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন করোনার টিকা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে। সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হয়তো একটু অসুবিধা হতে পারে, যারা ১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী, তাদের জন্য। সেসব বিষয় নিয়েও আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
দীপু মনি বলেন, দেড় বছরের বন্ধে সবারই ঘাটতি হয়েছে। সেটি পূরণের জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে, বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করানো। কিন্তু অনেকেই যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে চলছেন, তাতে করোনার সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি হবে। তাই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি। এ জন্য এখন সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কারণ, আবার করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) এক ডোজ টিকা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা যাবে না বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী নানা নির্দেশনাও দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, লঞ্চ ও ট্রেনে উঠতে গেলেও ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে সরকার। এ ছাড়া বাড়ির বাইরে মাস্ক ছাড়া চলাচল বন্ধ থাকবে।
তিনি বলেন, করোনার দুই ডোজ ভ্যাকসিন না নিলে ট্রেন ও উড়োজাহাজে চলাচল করা যাবে না। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁ, শপিংমলেও প্রবেশ করা যাবে না। এ ছাড়া সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমাগম সীমিত রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহনে অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখে যাত্রী চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ভাড়া বাড়ানো যাবে না। এটি পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বলে দেওয়া হবে।
বুস্টার ডোজ নিয়ে তিনি বলেন, বুস্টার ডোজ দেওয়ার বয়স সীমা ৬০ থেকে কমানো হবে। ফ্রন্টলাইনাররা সবাই শিগগিরই বুস্টার ডোজ পাবেন।
কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে এসব সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর করা হবে সেটি দু-এক দিনেই জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷