প্রেসিডেন্ট জিয়া কখনো নিজেকে সৈনিক, কখনো শ্রমিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট জিয়া কখনো নিজেকে সৈনিক, কখনো শ্রমিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আবার কখনো বলেছেন,"রাজনীতির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সরকার সম্পূর্ণ নির্দলীয় ও অরাজনৈতিক।" পরবর্তীতে তিনি সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন। দল গঠনে তিনি উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২২শে মে 'আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে' জেনারেল জিয়া ১৯দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার যখন ক্ষমতায় তখন দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিরোধীরা বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং দিশেহারা। তাঁর রাজনৈতিক দল গঠন ও জনগণের সমর্থন আদায়ে বিরোধীদের নিজেদের মধ্যে বিভক্তি প্রসিডেন্ট জিয়াকে রাজনীতির সর্বোচ্চ আসনে পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
জিয়াউর রহমান স্বভাবে ছিলেন ধীর-স্থির। তিনি এক-পা, দুই-পা করে এগিয়ে যান। তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য হ্যাঁ-না ভোটের আয়োজনও করেন। জিয়াউর রহমান তার রাজনৈতিক উদ্যোগ সফল করার জন্য বেসামরিক লোকদের কাছে টানার চেষ্টা করেন। উপদেষ্টামন্ডলীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও অধ্যাপকদের যোগ করেন। আর এটিই ছিল জিয়াউর রহমানের অন্যতম দূরদর্শিতা। রাজনীতির চূড়ায় উঠতে বেসামরিক লোক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের অন্তর্ভুক্তি তাঁকে মানুষের কাছে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
ভিতরে ভিতরে তিনি রাজনীতিবিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। ঐসময় ঢাকঢোল পিটিয়ে বাকশালে যোগ দেওয়া নেতারাও জিয়াউর রহমানের কৃপা পাওয়াও আশায় বাকশালের কঠোর সমালোচনা শুর করেন। রঙ বদল করা এসব রাজনীতিবিদদের সুবিধাবাদী মনোভাব জিয়াউর রহমান খুব ভালভাবে ধরতে পারেন। যেকারণে এসব রাজনীতিবিদের প্রতি তাঁর ঘৃণাও ছিলো। হয়তো একারণে বলেছিলেন, I will make politics difficult. সত্যিই পরবর্তীতে রাজনীতি অনেক ডিফিকাল্ট হয়ে গিয়েছিলো।
জিয়াউর রহমান মানুষের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে গ্রামে গ্রামে ছুটে চলেন আর মানুষের ভালো- মন্দের খোঁজখবর নিতে থাকেন। যেখানে কোনদিন ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানও যাননি, সেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়া যাওয়া শুরু করেন। এভাবে মানুষের কাছে সামরিক শাসক হয়েও জিয়াউর রহমান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।
সমমনা দলগুলো নিয়ে জোট গঠনের পাশাপাশি তিনি নিজের অনুগতদের নিয়ে আলাদা একটি দল গঠনেরও উদ্যোগ নেন। নিজেকে নেপথ্যে রেখে গঠন করলেন জাগদল। কিন্তু রাজনীতিতে এই দল খুব বেশি ঢেউ তুলতে না পারলে জিয়াউর রহমান নিজেই জাগদল বিলুপ্তি করলেন এবং মনে করলেন দলের নামের সাথে "জাতীয়তাবাদী" থাকা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেই নতুন দলের নাম দিলেন ' বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।" অরাজনৈতিক ও নির্দলীয় দাবি করা জিয়াউর রহমান এরপর থেকে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে গেলেন।
তাঁর শাসনকালের অল্প সময়ে জয় করে নেন মানুষের মন। এই মানুষটি ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। আজকে তাঁর জন্মদিন। জন্মদিনে এই মহান মুক্তিযোদ্ধার আত্মার শান্তি কামনা করছি। আমার কাছে সবসময় মনে হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো অন্যরকম এক বাংলাদেশ পেতাম। কিন্তু স্বাধীনতার পরে এই দু'জন মানুষকেই নিজের কাছের লোকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমান হত্যা কোন সহজ ঘটনা নয়, জাতিকে ধ্বংস করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
আর এই ষড়যন্ত্রের কারণেই পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই লক্ষ্য- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার আমরা আজও প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। জানিনা, কবে সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা বিনির্মান করতে পারবো.!
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷