'কথা বলে মানুষকে মুগ্ধ করা কঠিন। তবে বিষয়টি শুধু কষ্টের নয়, আনন্দেরও। কথার পিঠে কথা, একের পর এক প্রশ্ন করতে পারাই অনেক মজার। এখন তো লাইভে এত অভ্যস্ত হয়েছি যে, ধারণকৃত অনুষ্ঠানগুলোও লাইভ হয়ে যায়! রিটেক নিতে হয় না। সরাসরি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বুদ্ধিমত্তারও পরিচয় দিতে হয়। এ কারণেই এই কাজটি বেশ পছন্দের।' নিজের উপস্থাপনা নিয়ে এভাবেই বললেন শ্রাবণ্য তৌহিদা। প্রবাদ আছে, যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। শ্রাবণ্য তৌহিদাও কণ্ঠের জাদুময়তার আবেশ ছড়িয়ে দিচ্ছেন খেলার মাঠ থেকে বিনোদনের রঙিন দুনিয়া পর্যন্ত। উপস্থাপনায় তিনি রেখে চলেছেন বহুমাত্রিকতার ছাপ। এনটিভিতে প্রচার চলতি 'রূপকথার রাত', বাংলাভিশনে 'দুর্যোগে ভালোবাসা ছড়াই', দেশ টিভিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান 'স্বাস্থ্যকথা' নিয়ে দর্শকের সামনে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন তিনি। 'রূপকথার রাত' অনুষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ে তারকাদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি। আর 'দুর্যোগে ভালোবাসা ছড়াই' অনুষ্ঠানে বিভিন্ন অঙ্গনের জনপ্রিয় তারকারা অতিথি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে অনলাইনে হাজির হন। এতে অতিথিরা কথা বলেন ব্যক্তিজীবনের গল্প, নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে। শ্রাবণ্যের ছোটবেলা কেটেছে কুড়িগ্রামে। সেখানকার প্রতিটি কোনা চষে বেড়িয়েছেন তিনি। খেলাধুলার বেলায় ক্রিকেট বরাবরই শ্রাবণ্যর বেশি প্রিয়। ক্রিকেট বোঝেন, খেলেছেনও। তাই বিভিন্ন ক্রিকেট সিরিজের খেলার সময় জিটিভির অনুষ্ঠান 'ক্রিকেট ম্যানিয়া' উপস্থাপনা করেছেন তিনি। আইপিএল খেলা চলার সময়ও তাকে দেখা গেছে। এই অনুষ্ঠানটি তাকে বেশি জনপ্রিয় করেছে। এটি তার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
ডানা মেলে মুক্ত বিহঙ্গের মতো ওড়ার ইচ্ছা ছিল বলে ছোটবেলায় বৈমানিক হতে চেয়েছিলেন শ্রাবণ্য। মা-বাবার ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। পড়াশোনা শেষে সেখানে চাকরিও করছেন। করোনা মহামারিতে তিনি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন এই তারকা। মিডিয়ার অন্যান্য কাজের ব্যস্ততা থাকলেও এসময় চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। বর্তমানে তার কাজের চাপ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। শ্রাবণ্য বলেন, 'করোনার রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রথমদিকে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় চিকিৎসকরা শুরুর দিকে হিমশিম খেয়েছি। তখন প্রতি মুহূর্তে মনে হতো, আমাদের জন্য মৃত্যুফাঁদ অপেক্ষা করছে। কোনো রোগীর সংস্পর্শে গেলেই ভয় লেগেছে এটা ভেবে যে, তিনি করোনাভাইরাস বহন করছেন কিনা। বাসার কথাও চিন্তা করতে হয়। আমি যদি সংক্রমিত হই, আমার পরিবারও ঝুঁকিতে পড়বে। যদিও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিনের এই যুদ্ধ আমরা করে যাচ্ছি। চিকিৎসক যখন হয়েছি, মানবসেবায় নিজেকে সঁপে দিতে হবেই। যে কোনো অবস্থায় আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, চিকিৎসা দিয়ে যাই।' উপস্থাপনার পাশাপাশি মডেলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন তিনি। সত্যিই শ্রাবণ্য মডেলিং, চিকিৎসক, উপস্থাপনা পেশাকে গেঁথেছেন বিনি সুতার মালায়। তবুও প্রশ্ন জাগে, এত কিছু একসঙ্গে তিনি সামলান কীভাবে? শ্রাবণ্য বলেন, 'পরিকল্পনা করলে অনেক কাজ একসঙ্গে করা যায়। ইচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে। হাসপাতাল খোলা থাকলে একভাবে, আর খোলা না থাকলে অন্যভাবে ভাবতে হয়। পরিবার থেকে খুব সহযোগিতা পাই। এত কিছু করার পরও আমি নিয়মিত জিমে যাই। সময় নষ্ট করি না। তবে ব্যস্ততায় দিন কাটে এ কথা সত্যি। মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠি। আমার কাছে মনে হয় গতিই জীবন। গতিহীন জীবন মূল্যহীন। নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সবসময় সচেতন শ্রাবণ্য। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, বাবা সব সময়ই বলতেন, আমি একজন সুপার ওমেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আমি যা চাই তাই করতে পারি। কখনও হারতে শিখিনি। আমি আমার লক্ষ্যের দিকেই এগিয়ে চলেছি। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, প্রতিনিয়ত জীবনকে উপভোগ কিংবা অনুভব করার ব্রত নিয়েই পথ চলেন শ্রাবণ্য তৌহিদা। তার কথায় এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷