ডিলারশিপ ব্যবসায় কি কি করলে ভাল করে ব্যবসা করা যাবে?
ডিলারশীপ ব্যবসা করার সময় বেশি কিছু জিনিস এর উপর এ মনযোগ দিতে হবে।
অন্যান্য ব্যবসার মত এটাও একটা গুরুত্বপূর্ন ব্যাবসা, এই ব্যবসা করার আগে দু'ধরনের বিশ্লেষণ আপনাকে করতে হবে।
একটি হচ্ছে নিজের জন্য বিশ্লেষণ।
আরেকটি হচ্ছে আপনি যে কোম্পানির ডিলার হতে যাচ্ছেন সে কোম্পানীর জন্য একটা বিশ্লেষন করা।
প্রথমতঃ আপনাকে নিজের জন্যে কিছু বিশ্লেষন করতে হবে যেমন:
আপনি যে ব্যবসা টা শুরু করবেন এর জন্যে আপনাকে SWOT বিশ্লেষণ করতে হবে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকটা ব্যবসায় এটা করতে হয়।
আমার জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন ভালো আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে অর্থাৎ আপনি যে লোকেশনে ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেও লোকেশনে কি যথেষ্ট কাস্টমার আছে কিনা সেটা আপনাকে দেখতে হবে?
আমার কি আগে থেকে কাস্টমার তৈরি করা আছে কিনা?
রিটেইলারদের সাথে আমি কিরকম যোগাযোগ রাখব?
রিটেইলারদের সাথে আমার সম্পর্ক কি রকম থাকবে?
টেকনোলজি কে আমার গ্রহণ করার ক্ষমতা কতটুকু
প্রোডাক্ট বিক্রি করার ক্যাপাবিলিটি আছে কিনা অবশ্যই আমাকে সে বিষয়টা সবার আগে নজর দিতে হবে?
ফাইনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট কে আমি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো বা ব্যবস্থাপনা করবো সে বিষয়টা আমাকে খুব গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে যেমন: (কত টাকা পর্যন্ত বাকিতে পণ্য বিক্রি করব, কত টাকার পণ্য আমি স্টক করে রাখতে পারব, আমার ব্যবসার জন্য কিভাবে অর্থায়ন করব, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল কিভাবে ব্যবস্থাপনা করব, হিসাবের নিয়মকানুন গুলো কিভাবে ব্যবস্থাপনা করব? ডিজিটাল নাকি সনাতন পদ্ধতিতে? ইত্যাদি আরও বেশ কিছু বিষয়কে আমলে নিতে হবে)
আর অবশ্যই আমাকে একজন দক্ষ ডিলারশিপ ব্যবসায়ীর শরণাপন্ন হতে হবে এবং দরকার হলে আমাকে তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক এবং ফান্ডামেনটাল বিষয় গুলোকে শিখে নিতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ আমি যে কোম্পানির ডিলার নিব সে কোম্পানির সম্পর্কে কিছু বিশ্লেষণ আমাকে করতে হবে।
কোম্পানির প্রোডাক্ট কোয়ালিটি কেমন?
তাদের প্রোডাক্ট এর (ROI) রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট কেমন?
যদিও তাদের নতুন প্রোডাক্ট হয় সে প্রোডাক্ট এর গুণগত মান, কাঠামো এবং কাস্টমারের ফিডব্যাক কেমন?
কোম্পানিতে লো মার্জিন প্রডাক্ট কতগুলো এবং হাই মার্জিন প্রোডাক্ট কতগুলো?
কোম্পানির প্রোডাক্ট পোর্টফোলিও দেখতে হবে অর্থাৎ ফাস্ট মুভিং, স্লো মুভিং, এবং নন মুভিং প্রোডাক্ট কতগুলো প্রোডাক্ট কতগুলো?
কোম্পানির কমিশন স্ট্রাকচার কেমন?
কোম্পানী আমাকে কি রকম সাপোর্ট দিবে ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট, টেকনিক্যাল সাপোর্ট, মেটারিয়াল সাপোর্ট, যোগাযোগ করার সাপোর্ট ইত্যাদি।
কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট এর ব্র্যান্ড নিয়ে কতটুকু সচেতন অর্থাৎ তাদের মারকেটিং পলিসি গুলো কি রকম সেটা দেখতে হবে?
তাদের কম্পিটিশন কিরকম? খুব বেশি কম্পিটিশন হলে সে কোম্পানির ডিসট্রিবিউশন বা ডিলারশিপ পার্টনার না হওয়া উত্তম।
কোম্পানির সাথে ডকুমেন্টেশন কিরকম হবে? ডকুমেন্টেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ তাই ডকুমেন্টেশন করার সময় বুঝেশুনে আমাকে ডকুমেন্টেশন গুলো করতে হবে।
সর্বশেষ কোম্পানির ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট কে ( Balance Sheet, Profit & Loss and Cash Flow Statement ) বিবেচনা করতে হবে।
পুরো পৃথিবী জুড়ে এই ডিলারশিপ ব্যবসার একটি আলাদা কদর আছে এবং থেকে যাবে। এই ব্যবসাটা দুদিক থেকে অনেক জনপ্রিয় কোম্পানির দিক থেকে অনেক জনপ্রিয় এবং কোম্পানির কাস্টমার অর্থাৎ যারা ডিলার নিচ্ছে তাদের দিক থেকেও অনেক জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে অধিকাংশ কোম্পানির সফল ডিলারশিপ নেটওয়ার্ক এবং পার্টনার তৈরি করতে পেরেছে। কয়েকটি উদাহরণ আমি দিচ্ছি যারা ডিলারশিপ পার্টনার তৈরি করাতে বাংলাদেশে সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে এবং তাঁরা তাঁদের পার্টনারের সাথে নিয়মিত ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে ।
সহজেই তাদের পার্টনারের কে তারা পরিবর্তন করছে না এমনও কোম্পানি আছে যারা 20 বছর একই কোম্পানির সাথে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নেসলে বাংলাদেশ, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন, ম্যাটাডোর, বিকাশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, স্যামসাং, সনি, ওয়ালটন, আনোয়ার ইস্পাত, বিএসআরএম, আজিজ পাইপস লিমিটেড, স্কয়ার consumer's, অলিম্পিক ফুডস, পদ্মা অয়েল কোম্পানি, যমুনা অয়েল কোম্পানী ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টরে আরো কোম্পানি আছে যারা বাংলাদেশ বছরের পর বছর তাদের ডিলার পার্টনারদের সফলতার সাথে ব্যবসা চলমান করে যাচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷