ন্যাশনাল সার্ভিসের অর্থ লোপাটের ঘটনা তদন্তে গাইবান্ধা ও রংপুরে আলাদা তদন্ত কমিটি
ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং পরিচয় গোপনসহ নানা কৌশলে অর্থ লোপাটের ঘটনা তদন্তের জন্য পৃথক দু’টি তদন্ত কমটি গঠন করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। চার সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় আলাদাভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এরমধ্যে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রী’তে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর নানা অনিয়ম-দুনীতি ও জালিয়াতিসহ অর্থ লোপাটের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে বিষয়টি তদন্তের জন্য দুই জেলায় পৃথক দু’টি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মুঠোফোনে তিনি জানান, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অভিযোগে মন্ত্রণলয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গাইবান্ধা ও রংপুর জেলায় আলাদাভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কমিটির একজন জেলা প্রশাসকের কর্মকর্তা (এডিসি পদ মর্যাদা) ও একজন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের উপ-পরিচালকসহ তদন্তের মাঠে থাকবেন চার সদস্য।
তিনি আরও জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন ছাড়াও আরও কিছু সূত্র থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপজেলার ন্যাশনাল কর্মসূচী ও জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহসহ সরেজমিন তদন্ত করবে তদন্ত কমিটি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় কমিটিকে।
এরআগে, গত ১৬ জানুয়ারি যমুনা টেলিভিশনের ‘ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রী’তে ‘ন্যাশনাল সার্ভিসের ঊঁইপোকা’ সচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদন প্রচারের পর ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এতে টনক নড়ে নড়েচড়ে বসেন স্থানীয় প্রশাসনসহ যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এদিকে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীতে ইউএনও’কে বাইপাস করে ট্রেজারিতে বিল জমার ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে পত্র পাঠানো কথা জানিয়েছেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাম কৃষ্ণ বর্মন।
প্রতিবেদনে রংপুরের বদরগঞ্জ ও গাইবান্ধার সদর, সাদুল্লাপুর এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রাপ্ত সুবিধাভোগীর তালিকায় নানা অনিয়ম-দুনীতি ও জালিয়াতির বিস্তর তথ্য-চিত্র তুলে ধরা হয়। বেকার যুবক ও যুব নারীরা সুফলের পরিবর্তে এই প্রকল্পের মাঠের বাস্তবতায় উঠে আসে শুধুই দুর্নীতি আর জালিয়াতির নানা ঘটনা।
অনুসন্ধানে অসংখ্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও সার্টিফিকেট জালিয়াতি এবং অন্য জেলার বাসিন্দা এমনকি পরিচয় গোপন করেও কর্মসূচীর কোটি কোটি টাকা তুলে নেয়ার তথ্য-প্রমাণ বেড়িয়ে আসে। এসব অনিয়ম-দুনীতি ও জালিয়াতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন সিন্ডিকেট জড়িতের পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত উঠে আসে অনুসন্ধানে। শুধু তাই নয়, কর্মকর্তাদের নানামুখী দুর্নীতি-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাত ছাড়াও নারী কেলেংকারীর ঘটনাতেও অভিযুক্ত। অথচ বরাবরেই ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনসহ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নীরবতায় পার পেয়ে যান অভিযুক্তরা। বর্তমানে এই প্রকল্পের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান আছে।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷